জেলার নেতাদের হুঁশিয়ারি মমতার, ইগো দেখালে একদিনে পদ থেকে সরিয়ে দেব
বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, বড়জোড়া: মঙ্গলবার বড়জোড়ার জনসভা থেকে দলের নেতাদের কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেদের মধ্যে ‘তুই বড় না মুই বড়’ করলে রেয়াত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তৃণমূলনেত্রী। জনসভায় বক্তব্য রাখার মাঝে এসআইআর ইস্যুতে তৃণমূলনেত্রী বলেন, এখন মানুষের জন্য লড়াই করতে হবে। জেলার চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্টদের বলছি, কেউ ইগো দেখালে একদিনে পদ থেকে সরিয়ে দেব। যে কাজ করবে না, তার তৃণমূলে থাকার দরকার নেই। দলের কর্মীরাই লড়াই করেন। তাঁরাই মারা যান। কর্মীরাই আমার সম্পদ।’
এদিন দুপুর ১টা নাগাদ বড়জোড়ার বীরসিংপুর মাঠের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী এসে পৌঁছন। মহিলারা উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের উদ্দেশে অভিবাদন জানান। মঞ্চে ধামসা, মাদলের তালে আদিবাসী শিল্পীদের নাচের তালে তিনি পা মেলান। নিজে ধামসাও বাজান। তবে সভামঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় তৃণমূলনেত্রী ছিলেন আক্রমণাত্মক। এদিন তাঁর আক্রমণের মূল্য লক্ষ্য ছিল বিজেপি। তবে ওবিসি নিয়ে ঘন ঘন আদালতে গিয়ে নিয়োগ ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি বামেদেরও এক হাত নেন। বিরোধীদের আক্রমণ করার পাশাপাশি দলের নেতাদেরও যে তিনি ছেড়ে কথা বলেননি।
মমতা বলেন, বিজেপি বয়স্কদের হয়রান করার পাশাপাশি নতুন ভোটারদেরও টার্গেট করছে। ভোটার হওয়ার জন্য অনেকেই আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন। বিভিন্ন অজুহাতে সেইসব আবেদনপত্র বস্তাবন্দি করে রাখা হচ্ছে বলে আমি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুনানিতে যাতে কাউকে বাদ না দিতে পারে তারজন্য সাধারণ মানুষের পাশে দলের নেতা-কর্মীদের থাকতে হবে। কার কী নথি প্রয়োজন, তা দলের বুথস্তরের এজেন্টদের(বিএলএ-টু) দেখতে হবে। কোনওভাবেই মানুষের সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।
বাঁকুড়ায় তৃণমূলের দু’টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র ধরে ওই দুই সাংগঠনিক জেলা গঠন করা হয়েছে। দুই জেলায় পৃথক সভাপতি ও চেয়ারম্যান রয়েছেন। এছাড়াও দুই সাংগঠনিক জেলার আলাদা আলাদা কমিটি ও শাখা সংগঠন রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেক সময় দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা গিয়েছে। এক নেতা অন্যের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। এসআইআর পর্বে নেতৃত্বের মধ্যে বিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে থাকা কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত রয়েছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে দলের কাছে এনিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পৌঁছেছে। সেই কারণেই এদিন তৃণমূলনেত্রী মঞ্চে নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কে কত বড় নেতা সেটা ব্যাপার নয়, সাধারণ মানুষের পাশে না থাকলে যে দল তাঁকে ছেঁটে ফেলতে এক মুহূর্তও ভাববে না, তা এদিন মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। বাঁকুড়ার সাংসদ তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা নেত্রীর নির্দেশমতো একজোট হয়ে কাজ করব।’ ছবি: ভৈরব দাস।