তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রকে জবাব, ‘মমতা জমি না দিলে বাস্তবায়ন হল কী করে?’
বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বড়জোড়া: তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার জমি না দেওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যাচ্ছে না বলে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ তোপ দাগেন। এদিনই বড়জোড়ার দলীয় জনসভা থেকে তার কড়া জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমি জমি দিচ্ছি না বলে শকুনি মামার চ্যালারা বলে বেড়াচ্ছে। মমতা জমি না দিলে বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেলপথ কীভাবে হল? রানিগঞ্জ, জামুড়িয়ায় ইসিএল কীভাবে কয়লা উত্তোলন করছে? ঘোকসাডাঙা, অণ্ডালে কে জমি দিয়েছে? জমি ইস্যুর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বিএসএফের গতিবিধির এলাকা বৃদ্ধি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন।
দীর্ঘ দেড় বছর পর এদিন মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া সফরে আসেন। বড়জোড়া বিধানসভা এলাকায় বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের পাশে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী দলীয় জনসভায় বক্তব্য রাখেন। ওই সভায় তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী, স্থানীয় বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে টার্গেট করেন। কখনও নাম করে আবার কখনও নাম না করে তিনি শাহকে এদিন বিঁধেছেন।
তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক হ্যাংলা বাংলা দখল করার জন্য সারাক্ষণ অনুপ্রবেশকারী খুঁজে বেড়াচ্ছে। একজন দুঃশাসন বাংলায় এসেছে। ভোট এলেই বাংলায় দুঃশাসনরা আসে। তাদের চোখ দেখলে ভয় লাগে। জমির কথা বলে ওরা লোককে বিভ্রান্ত করছে। রঘুনাথপুর থেকে ডানকুনি পর্যন্ত আমরা শিল্প করিডর করছি। ওই করিডর বাঁকুড়ার উপর দিয়ে যাবে। তার দু’পাশে আগামী দিনে বহু কলকারখানা তৈরি হবে। শিল্পের পাশাপাশি আমরা বাঁকুড়ায় ১৩৪ কোটি টাকায় ১২টি সেতু গড়েছি। এছাড়াও হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে একাধিক জলপ্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। তারজন্যও জমির কোনও অভাব হয়নি। এছাড়াও সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার জন্য আমরা অনেক জমি দিয়েধি। আগে সেগুলি বেড়া দিক।
উল্লেখ্য, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার জন্য একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তারমধ্যে বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেলপথ অন্যতম। নানা জটিলতার কারণে মাঝে ওই প্রকল্প থমকে ছিল। পরে তা অনেকটাই মিটেছে। ফলে সীমান্তে জমি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সরকারকে বিজেপি-র আক্রমণের জবাব এদিন মমতা কেন্দ্রেরই রেল মন্ত্রকের একটি প্রকল্পের উদাহরণের মাধ্যমে দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
সাংসদ বলেন, আমাদের দলনেত্রী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেল প্রকল্পেরও ঘোষণা করেছিলেন। ওই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের কাজও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। এখন কেন্দ্র আর ওই প্রকল্প নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। আমি বিষয়টি সংসদে তুলেছিলাম। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকেও জানিয়েছি। কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয়নি।
অলোকবাবু বলেন, বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের যোগাযোগের জন্যও আমাদের সরকার রাস্তাঘাট সহ অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করেছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে শিল্প করিডরের উল্লেখ করেছেন। নতুন করে কেউ শিল্প গড়তে চাইলে জমির কোনও অভাব হবে না।
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা হচ্ছে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক। তার জন্যই তৃণমূল সীমান্ত উন্মুক্ত রেখেছে। রেল সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার বহু প্রকল্প এরাজ্যে রূপায়ণ করেছে।