• এসআইআর আবহে ভোটের হুংকার, ‘উৎসব একটাই, বিজেপির বিসর্জন’
    বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, বড়জোড়া: অব কী বার... ২০০ পার! স্বপ্নভঙ্গ ২১’এ! এবার ২০২৬! রাজ্যে এসে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় দুই-তৃতীয়াংশ আসন দখল করে ক্ষমতায় আসার ‘খোয়াব’ বিলি করলেন। বিজেপি’র সেকেন্ড ইন কমান্ডের ‘অতি প্রত্যয়ী’ বার্তা পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে জবাব দেন মমতা। বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সভামঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো ইঙ্গিতবাহী কটাক্ষ বাণে বিঁধে দেন গেরুয়া শিবিরকে। বললেন, ‘গতবার বলেছিল, ইসবার দুশো পার। এবার আর ২০০ পার বলতে পারছে না। এবার বলছে, দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাবে! আমি আগে বলতাম কাঁচকলা পাবে। এখন বলছি, ঘেঁচু পাবে!’ গেরুয়া শিবিরকে তাঁর পরামর্শ, ‘ঘেঁচুটা বাংলা শব্দ। তোমরা পারলে এর ইংরেজি তর্জমাটা খুঁজে নিও।’ এবার দৃপ্ত কণ্ঠে মমতার ঘোষণা— ‘ইস বার দেশ সে বাহার! এবার দেশ থেকে বাইরে যাবে তোমরা। রাজনৈতিকভাবে এই কাজের পথ দেখাবে বাংলাই।’ কালো মাথার ভিড় সোল্লাসে সায় দিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত সভাস্থল। বাংলা-বাঙালির আত্মসম্মান আর অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের দামামা বাজিয়ে মমতার নিদান—‘এখন কোনও উৎসব নেই, পিকনিক নেই। এখন উৎসব একটাই, বিজেপির বিসর্জন!’

    বড়জোড়ার সভায় মহিলাদের ভিড় ছিল উল্লেখ করার মতো। বাংলার সেই মা-বোনেদের দরবারে মমতার নিবেদন—‘এসআইআর পর্বে এবার বিজেপি নেতারা পার পেয়ে গেলেও ভোটের সময় তাঁদের বাংলায় আসতেই হবে। তখন তাঁদের নাড়ু খাওয়ানো হবে। বাংলার মা-বোনেরা ভালো নাড়ু, মোয়া তৈরি করেন। এবার নাড়ুর সঙ্গে ঝাড়ুও দেওয়া হবে।’ উপস্থিত মহিলাদের উচ্ছ্বাস আর উল্লাস উপলব্ধিতে নিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পদ্মপার্টির প্রতি মমতার প্রত্যয়ী বার্তা—‘এবারও খেলা হবে। ফাটাফাটি খেলা। তাতে বিজেপির কী হবে, তা আমি বলব না। আপনারা ছন্দ মিলিয়ে বলে দেবেন। এবার গড়ব, লড়ব, জিতব!’

    বাংলায় এসআইআরের শুনানি পর্ব চলছে। ভোগান্তি বাড়ছে বয়স্ক-অসুস্থ মানুষ, বিশেষ ভাবে সক্ষম সহ সাধারণের। নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কায় কখনও ভোটার, আবার কখনও বিএলও আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা রোজনামচায় পরিণত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ মাথায় রেখেই তৃণমূল সুপ্রিমো একযোগে আক্রমণ হেনেছেন বিজেপি-নির্বাচন কমিশনকে। তাঁর কথায়, ‘নির্বাচন কমিশন বিজেপির দালাল। আইটি সেলের কথামতো ঠান্ডা ঘরে বসে বাংলার ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় দু’মাস ধরে এসআইআর করলেন। আর মাত্র দু’দিনে দেড় কোটি লোকের নাম বাদ দিয়ে দিলেন!’ দৃশ্যত ক্ষিপ্ত মমতা বলেন, ‘হোম মিনিস্টার পদত্যাগ করুন। ইউ মাস্ট রিজাইন। বিজেপি শুধু বাংলায় অনুপ্রবেশকারী খুঁজে পায়। তাদের মতে দেশের অন্য কোথাও অনুপ্রবেশকারী নেই। তাহলে পহেলগাঁও গণহত্যা কে ঘটাল? দিল্লি বিস্ফোরণই বা কাদের কাজ? সেগুলো কি তবে আপনারা করেছেন?’

    কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি আমার মন্ত্রীদের জেল খাটিয়েছেন। এসআইআরের চাপে রাজ্যে ৫৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু কেন, এটা খুন! সেই মানুষ খুনের জন্য আপনি কতবার জেলে গিয়েছেন?’ মমতার হুঁশিয়ারি— ‘বাংলার একজন বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়লে, গোটা রাজ্যের পাশাপাশি আন্দোলন কিন্তু দিল্লিতেও হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)