নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: মধ্যরাতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে গেল বিরাটি স্টেশন লাগোয়া প্রাচীন যদুবাবুর বাজার। ১৮০টিরও বেশি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন ঘণ্টা চারেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ২০০১ সালে লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন একইভাবে পুড়ে খাক হয়েছিল এই বাজার। ফের একবার সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসলেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সাতসকালে দেখা গেল, অনেকেই ছাইয়ের স্তূপের মধ্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন, যদি কিছু অক্ষত পাওয়া যায়। রুটি-রুজি হারানোর যন্ত্রণা তাঁদের চোখে-মুখে। এদিন দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, এই জায়গায় নতুন করে আধুনিক বাজার তৈরি করা হবে। তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে তিনি ৫৫ লক্ষ টাকা দেবেন বলেও ঘোষণা করেন। উত্তর দমদম পুরসভাও বাজার তৈরির পাশাপাশি নানাভাবে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
বিরাটি স্টেশন লাগোয়া যদুবাবুর বাজার বহু পুরোনো। এই বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা আসেন। দোকানের সংখ্যা ১৮৯টি। সামনেই নতুন বছর। বছরের প্রথম সপ্তাহে ভালো কেনাবেচার আশায় দোকানিরা লক্ষ লক্ষ টাকার সামগ্রী তুলেছিলেন। সব শেষ হয়ে গেল বিধ্বংসী আগুনে।
বাজারের পাশেই প্রচুর বসতবাড়ি ও দোকান রয়েছে। সোমবার রাত ১টা ৫ মিনিট নাগাদ এক ব্যবসায়ী বাজার থেকে বেরিয়ে যান। তখন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। রাত ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ ওই নিরাপত্তারক্ষী প্রথম মিটার ঘর লাগোয়া এলাকায় আগুন দেখতে পান। খানিক বাদেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজারে। কার্যত জতুগৃহের রূপ নেয় যদুবাবুর বাজার। পরপর ফাটতে শুরু করে খাবার দোকানের গ্যাস সিলিন্ডার। তাতে আরও ভয়াবহ আকার নেয় আগুন। ঘিঞ্জি গলি হওয়ায় দমকলের গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়। শেষে বিরাটি ফ্লাইওভারের উপর দমকলের গাড়ি রেখে সেখান থেকে জলের পাইপ নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে চারটি দোকান বাদে বাকি সবই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, দোকান থেকে কোনও সামগ্রী বের করা দূরের কথা, টাকাপয়সাও বের করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
রাতেই বারাকপুর কমিশনারেটের আধিকারিক, নিমতা থানার পুলিশ, উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস সহ কাউন্সিলাররা ওই দগ্ধ বাজারে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে আসেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানার চেষ্টা করেন। পরে পুরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘সর্বগ্রাসী আগুনে বাজারের প্রায় সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কীভাবে আগুন লাগলো, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুরসভা ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে এখানে আধুনিক বাজার গড়ে তুলবে। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জঞ্জাল অপসারণ সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। আমি বিধায়ক তহবিল থেকে ৫৫ লক্ষ টাকা দেব। নিমতায় নতুন দমকল কেন্দ্র হওয়ায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’