• বিকাশের পালে হাওয়া, উদ্ভাবনের রাস্তায় ভারত: নরেন্দ্র মোদী
    এই সময় | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নরেন্দ্র মোদী

    প্রধানমন্ত্রী

    ২০২৫ ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী 'সংস্কারের বছর' হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতে, দেশ আজ এক শক্তিশালী 'রিফর্ম এক্সপ্রেস'-এ সওয়ার হয়েছে, যার চালিকাশক্তি হলো ভারতের অদম্য তরুণ প্রজন্ম ও জনবিন্যাসগত সুবিধা। গত ১১ বছরের মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এই সংস্কার যাত্রার মূল লক্ষ্য হলো আধুনিকীকরণ, সরলীকরণ এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক আমূল পরিবর্তনের সাক্ষী থাকছে দেশ। জিএসটি কাঠামোকে আরও সহজ করে ৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশের দ্বিস্তরীয় মডেলে নিয়ে আসা হয়েছে, যা সাধারণ পরিবার ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের করের বোঝা কমিয়েছে। সবথেকে বড় স্বস্তি এসেছে মধ্যবিত্তের জন্য। বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় এখন সম্পূর্ণ করমুক্ত। পাশাপাশি, ১৯৬১-এর প্রাচীন আইনের বদলে এসেছে আধুনিক ও সরল 'আয়কর আইন ২০২৫'। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংজ্ঞাও পরিমার্জিত হয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনকারী সংস্থাগুলিকেও এই বর্গের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বাণিজ্যিক খরচ কমানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

    বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের আঙিনায় ভারত এখন অনেক বেশি উন্মুক্ত। বিমা ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদিত হওয়ায় গ্রাহক নিরাপত্তা ও পরিষেবার মান বৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পেশ হয়েছে 'সিকিউরিটিজ মার্কেট কোড বিল'। বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারে ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড ও ওমানের মতো দেশ এবং ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থার (ইএফটিএ) সঙ্গে ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে দেশীয় পণ্য বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা অনুপ্রাণিত হবেন। সামাজিক ও গ্রামীণ পরিকাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আনতে আনা হয়েছে 'বিকশিত ভারত- জি রাম জি আইন' যেখানে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে ইউজিসি ও এআইসিটিই-র বদলে তৈরি হচ্ছে একক নিয়ন্ত্রক সংস্থা 'বিকশিত ভারত শিক্ষা অধিষ্ঠান'। শ্রম সংস্কারের মাধ্যমে ২৯টি পুরোনো আইনকে চারটি আধুনিক বিধিতে আনা হয়েছে, যা নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

    এ ছাড়া নীল অর্থনীতি ও সমুদ্রপথের উন্নয়নে পাঁচটি যুগান্তকারী বিল পাশ হয়েছে এবং কয়েকশো অপ্রাসঙ্গিক পুরোনো আইন বাতিল করে 'ইজ অফ ডুইং বিজনেস'-কে জোরদার করা হয়েছে। যার ফলে প্রত্যেকটি দেশের জন্য ব্যবসা শুরু, পরিচালনা এবং বন্ধ করার প্রক্রিয়া সহজ ও বাধাহীন হয়েছে। পারমাণবিক শক্তি সংস্কারের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন শক্তি ও এআই যুগের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বেসরকারি অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ভারতের এই ক্রমবর্ধমান বিকাশ যাত্রায় দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীরা অংশ নিন এবং ভারতের মানুষের ওপর আস্থা রাখুন। এই সর্বাত্মক সংস্কারগুলি কেবল একটি নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি নয়, বরং নাগরিকদের আস্থার ওপর ভিত্তি করে একটি সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল 'বিকশিত ভারত' গড়ার ধ্রুবতারা হিসেবে কাজ করবে।

  • Link to this news (এই সময়)