• নিয়ম ভেঙে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা গুজরাতকে দিল মোদি সরকার
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: পুলিসের পোশাক থেকে শুরু করে রেশন কার্ড, সারা দেশকে বিভিন্ন বিষয়ে একসূত্রে বাঁধতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আবার দলমত নির্বিশেষে দেশের সার্বিক বিকাশের কথাও শোনা গিয়েছে তাঁর ভাষণে। অথচ, গ্রামোন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের প্রকল্পে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ল তাঁরই ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এর তত্ত্ব। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতকে নিয়ম বহির্ভূতভাবেই সুবিধা পাইয়ে দিল কেন্দ্র। এই সত্য প্রকাশ পেয়েছে কেন্দ্রেরই রিপোর্টে। 

    পঞ্চদশ অর্থ কমিশন মারফত বিগত বছরগুলিতে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে তার অন্তত ২৫ শতাংশের অনলাইন অডিট সম্পূর্ণ হওয়া চাই। তবেই মেলে পরবর্তী অর্থবর্ষের টাকা। গ্রামোন্নয়নের কাজে এটাই কেন্দ্রের নির্ধারিত নিয়ম। এই শর্ত পূরণ না-হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবর্ষের টাকা টানা চারমাস আটকে রেখেছিল দিল্লি। কিন্তু একই যাত্রায় পৃথক ফললাভ হয়েছে মোদির নিজের রাজ্য গুজরাতের। বিগত বছরগুলিতে, এই ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন মারফত প্রাপ্ত টাকার জন্য অনলাইন অডিটের হার ছিল ২৫ শতাংশের (২৪.৯৮ শতাংশ) নীচেই। তা সত্ত্বেও চলতি অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তির টাকা পেতে গুজরাতের কোনও সমস্যা হয়নি। তাদের প্রাপ্য অর্থ ইতিমধ্যেই ছেড়ে দিয়েছে মোদি সরকার। 

    কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট পোর্টালে এই তথ্য দেখে বাংলার আধিকারিকদের চক্ষু চড়কগাছ! তাঁদের বক্তব্য, বাংলার ক্ষেত্রে নিয়মের একসুতো এদিক-ওদিক হওয়ার জো নেই। অথচ, ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলির বেলায় সমস্ত বজ্র আঁটুনিই ফস্কা গেরো হয়ে যাচ্ছে। দিল্লির এই একচক্ষু নীতিই পরিষ্কার করে দিচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিছক রাজনৈতিক রং বিচারের শিকার হয়ে পড়েছে।  প্রসঙ্গত, গ্রামীণ এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি, পানীয় জল সরবরাহ এবং অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পের ১০০ শতাংশ টাকাই কেন্দ্র দেয়। 

    তাই অনলাইন অডিটের বিষয়টি দিল্লি বিশেষ গুরুত্বসহকারেই বিচার করে। কিন্তু গুজরাতের ক্ষেত্রে এই ‘অনিয়ম’ই এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলার প্রশাসনিক মহলে। কারণ গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় শর্ত মানতেই কালঘাম ছুটছে নবান্নের। বাংলার একেবারে তৃণমূল স্তরের কর্মী থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ আধিকারিক—বস্তুত সবাইকেই ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে কেন্দ্রের এই অতিসক্রিয়তা। 

    প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিজেপি শাসিত অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া প্রভৃতি কয়েকটি রাজ্যে অডিটের ছবিটা আরও খারাপ। অডিটের হার শূন্য থেকে দশ শতাংশের মধ্যেই! নবান্নের এক আধিকারিকের বক্তব্য, অডিটের হার ১০ শতাংশের নীচে বলেই হয়তো নিতান্ত চক্ষুলজ্জায় পড়ে ওই রাজ্যগুলিকে টাকা ছাড়তে পারেনি কেন্দ্র। ওই হার ২০ শতাংশের বেশি হলেই হয়তো তাদেরও টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে উদার হতো সরকার। নিয়মের গেরো কাঁটায় কাঁটায় বজায় থাকে শুধু বাংলারই জন্য। 

    পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, এর থেকেই ফের একবার প্রমাণিত হয় যে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ কেন্দ্র। শুধু বিরোধী রাজ্য বলেই বঞ্চিত বাংলা। 
  • Link to this news (বর্তমান)