• অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে কেরামতি, নদীতে উদ্ধার যুবকের দেহ
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
  • এই সময়, কৃষ্ণনগর : পরের দিন ভোর চারটেয় ভাড়া আছে বলে রবিবার রাতে বাড়ির কাছের গলিতে অ্যাম্বুল্যান্স (Ambulance) এনে রেখেছিলেন চালক। বাবার কাছ থেকে চাবি চুরি করে এক বন্ধুকে নিয়ে গাড়ি চালানোর কেরামতি দেখাতে গিয়েছিলেন ছেলে। নদীর একদম গায়েই গলির মধ্যে রাখা ছিল অ্যাম্বুল্যান্সটি (Ambulance)। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীর বাঁধানো ঘাটের ৩০টির বেশি সিঁড়িতে ধাক্কা খেতে খেতে গড়িয়ে। তার পর মাঝনদীতে গিয়ে ডুবে যায় অ্যাম্বুল্যান্স (Ambulance)। চালকের আসনে বসে কেরামতি দেখাতে যাওয়া যুবক প্রাণে বাঁচলেও অ্যাম্বুল্যান্সটি জল থেকে তোলার পর ভেতর থেকে সঙ্গী যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

    নদিয়া (Nadia) জেলার কৃষ্ণনগরের কোতয়ালি থানার (Kotwali Police Station) ঘূর্ণির বক্সিপাড়াঘাট লেনের ঘটনা। মৃত যুবকের নাম তীর্থরাজ বিশ্বাস (২২)। সোমবার ভোরে মৃতদেহ উদ্ধারের পর বাড়ির লোকজনের প্রশ্ন, এটা খুনের ঘটনা নয়তো? কারণ, রবিবার রাতে দুই বন্ধু পাড়ার পিকনিকে গিয়েছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, গভীর রাতে এই অঘটন ঘটে। চালকের আসনে বসা যুবক রাজ হালদার কী করে গাড়ি থেকে সহজেই বেরিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন, এ প্রশ্ন তুলছেন মৃতের বাড়ির লোকেরা। একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, রাজ মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কোতয়ালি থানার পুলিশ (Kotwali Police Station)।

    ঘূর্ণির বক্সিপাড়াঘাট লেন মানে কৃষ্ণনগর-করিমপুর বাস রাস্তা থেকে বেরনো ছোট্ট একটা গলি। আর গলির শেষে জলঙ্গি নদীর বাঁধানো ঘাট। রাতে যেখানে অ্যাম্বুল্যান্সটি রাখা ছিল, জলঙ্গি নদীর ঘাট তার মাত্র পঞ্চাশ হাত পিছনে। তীর্থ এবং রাজ দু'জনের বাড়ি একই পাড়ায়। ঘটনাস্থল থেকে এক-দু'মিনিটের হাঁটাপথের দূরত্বে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করেছিলেন তীর্থ। তরতাজা যুবকের এমন মৃত্যুতে গোটা পাড়ায় শোকের ছায়া নেমেছে।

    রবিবার বর্ষ শুরুর প্রথম রাতে বক্সিপাড়ার একটি ক্লাবের কাছে পিকনিক ছিল। তাতে ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালক নারায়ণ হালদারের ছেলে রাজ ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ার (Picnic) গিয়েছিলেন তীর্থরাজও। তাঁর জ্যেঠু তুষার বিশ্বাস বলেন, "রবিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ একবার বাড়িতেও এসেছিল তীর্থ। পরে রাজ নামের ওই বন্ধু ফোন করে ডাকলে ফের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাত দুটো নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সের মূল চালক প্রতিবেশী নারায়ণ আমাদের বাড়িতে ছুটে এসে খবর দেয় গাড়িটি জলে ডুবে গিয়েছে। তীর্থ তার মধ্যে আছে।"

    এরপর রাত থেকেই নদীতে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পুলিশ ও দমকল কর্মীরা রাতেই ছুটে আসেন। ভোর চারটে নাগাদ ক্রেন দিয়ে নদী থেকে তোলা হয় (Ambulance)। গাড়ির পিছনের আসনের কাচ বন্ধ ছিল। সেখান থেকে তীর্থের দেহ উদ্ধার হয়। ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় পুলিশ রাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। রাজের বাবা নারায়ণের বক্তব্য জানা যায়নি। তীর্থের জ্যেঠু তুষার বলেন, "রাতের ঘটনা যা ঘটেছে, সবটাই নারায়ণ এবং রাজের কাছে শোনা। ওর ছেলে মদ খেত বলে জানি। আমাদের সন্দেহও জাগছে, কোনও বচসার জেরে খুনের ঘটনা নয় তো?"

    স্থানীয় পুর কাউন্সিলর অসিত সাহা বলেন, "ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঠিক কীভাবে মৃত্যু, তা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে জানা যাবে। পুলিশি তদন্ত শেষে কারণ বোঝা যাবে। ওই পাড়ায় কেউ কেউ মদের আসর বসাচ্ছে, এরকম খবর পেয়েছি।"
  • Link to this news (এই সময়)