• Hand Writings : আত্মহত্যাপ্রবণ! বলে দেবে হাতের লেখা
    এই সময় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়

    উড়ন্ত ড্রোনে ধরা পড়েছিল দৃশ্যটা। সিলিং থেকে ঝুলছে ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র জয় লোবোর দেহ। ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকার পর ঝুলন্ত দেহ ছাড়াও দর্শকদের নজরে আসে দেওয়ালে লেখা দু'টি শব্দ- 'আই কুইট'। পাঁচটি অক্ষরের প্রতিটি যেন দেগে দেওয়া হয়েছে দেওয়ালের গায়ে। হাতের লেখা বিশেষজ্ঞরা কিন্তু ওই লেখার দিকে একঝলক তাকিয়েই বলে দিতে পারতেন যে, চরম হতাশা ও মানসিক টানাপড়েনে ভুগতে ভুগতে নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জয়। সন্ধ্যা চক্রবর্তীর ডায়েরিটা দেখলে হয়তো হাতের লেখায় একই ধাঁচ খুঁজে পেতেন হাতের লেখার বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ওই ডায়েরি শেষ পর্যন্ত তাঁদের হাতে পড়েনি। কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে সন্ধ্যা আত্মহত্যা করার পর সেই ডায়েরি পড়েছিলেন পদ্মপুকুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর তিনকড়ি হালদার। সেই ডায়েরির সূত্র ধরেই ঘুঘুডাঙার সেনবাড়িতে তাঁর আসা। 'থানা থেকে আসছি' ছবিতে।

    'কেমন আছেন'? এই প্রশ্নের উত্তরে যান্ত্রিক একটা হাসি দিয়ে 'ফার্স্ট ক্লাস' বলে পাশ কাটিয়ে চলে যান ৯০ শতাংশ পরিচিতই। কিন্তু সত্যিই কি তিনি 'ফার্স্ট ক্লাস' আছেন? মুখে যতই বানিয়ে বলা হোক, মনের মধ্যে কী চলছে, সেটা কোনও রকম রাখঢাক না-করতে পেরে পুরোপুরি প্রকাশ করে ফেলে মানুষের হাতের লেখা। ওই লেখা দেখে একজন গ্রাফোলজিস্ট অর্থাৎ হাতের লেখার বিশেষজ্ঞ ধরে ফেলতে পারেন সব কিছু। এবং ধরেছেনও। করোনাকালের আড়াই বছরে অন্তত ৪৬ জনের হাতের লেখা দেখে তাঁদের নিশ্চিত ভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছেন কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ গ্রাফোলজির কর্ণধার মোহন বসু। আবার মানসিক ওই অবসাদগ্রস্তদের ফের স্বাভাবিক করা হয়েছে তাঁদের হাতের লেখার পরিবর্তন ঘটিয়েই।

    কারও বয়স ১২, কারও আবার ৫০। কেউ চাইছে আইফোন। কারও চাকরি গিয়েছে, সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা মাথার উপরে। কেউ না-পাওয়ার হতাশায় ভুগছেন, কেউ অসহায়তায়। এমনই নানা ধরনের মানুষকে আড়াই বছর ধরে মানসিক শক্তি জুগিয়ে এসেছেন কলকাতার ওই গ্রাফোলজিস্ট। এর মধ্যে রয়েছে ক্লাস টুয়েলভের এক ছাত্রও। তার মা-র কথায়, 'ল্যাপটপের প্রতি আমার ছেলের আসক্তি ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছেছিল। আমরা ওর থেকে ল্যাপটপ কেড়ে নিয়েছিলাম। তার পর আমার ছেলে ১২টা প্যারাসিটামল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।' চিকিৎসার পর দিশাহারা মা-বাবা যোগাযোগ করেন মোহন বসুর সঙ্গে।

    মোহনের তালিকায় রয়েছেন ৪৫ বছরের এক ব্যক্তিও। তাঁর চাকরি চলে যায় করোনাকালে। হতাশায় তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে ভেবেছিলেন। শেষ পর্যন্ত মোহন বসুর পরামর্শে হাতের লেখার পরিবর্তন করেন ওই ব্যক্তি। এখন তিনি চূড়ান্ত আশাবাদী। কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ গ্রাফোলজির ২০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আত্মহত্যার প্রবণতা ধরা এবং সারানোর ক্ষেত্রে হাতের লেখার ভূমিকা প্রসঙ্গে মোহন বসু বলেন, 'আত্মহত্যার দু'টো ধাপ থাকে। প্রথম ধাপ হলো, প্রস্তুতি নেওয়ার ধাপ। এই ধাপ এক-দু'বছর দীর্ঘও হতে পারে। পরের ধাপ খুবই স্বল্পস্থায়ী। এই সময়েই মানুষ আত্মহত্যা করে।' মোহনের কথায়, 'মানুষ প্রথম ধাপে রয়েছে কি না, সেটা বলে দেয় হাতের লেখা। সেই লক্ষণ বুঝতে পারলে অবসাদগ্রস্তকে বাঁচানো সম্ভব।' ওই বিশিষ্ট গ্রাফোলজিস্ট জানাচ্ছেন, হাতের লেখায় কিছু পরিবর্তন করলে মানুষের নেতিবাচক মানসিকতার বদলও সম্ভব।

    সত্যিই কি হাতের লেখা কোনও মানুষের মানসিকতার প্রতিবিম্ব হতে পারে? হাতের লেখার এই বিশ্লেষণকে কি স্বীকৃতি দিচ্ছেন মনোবিদরা?

    বিশিষ্ট মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলছেন, 'আমার জীবনে এমন একাধিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, যার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে হাতের লেখা বিশ্লেষণের বিষয়টা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিতে পারি না। বিশেষ করে, পেশাদার জীবনে দেখেছি, পড়ুয়াদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হাতের লেখা অনেক ক্ষেত্রেই থেরাপির কাজ করে।' কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অ্যাডোলেসেন্ট ক্লিনিকের মনোবিদ অমৃতা চক্রবর্তীর বক্তব্য, 'মনোবিজ্ঞানের একেবারে বিশেষ একটা বিভাগ গ্রাফোলজি। হাতের লেখার বিশ্লেষণ আলাদা করে শিখতে হয়।'
  • Link to this news (এই সময়)