• TMC On Adani Issue : বিশৃঙ্খলার প্রশ্নই নেই সংসদে, তৃণমূল চায় আলোচনা
    এই সময় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়াদিল্লি

    কংগ্রেস, আরএসপি-সহ বিরোধী শিবিরের বাকিদের মতো আদানি-প্রতারণা প্রশ্নে সংসদ অবরুদ্ধ করতে চায় না তৃণমূল। বরং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অভিভাষণের উপরে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্বে অংশ নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে আদানি ইস্যু উত্থাপন করতে চায়, রবিবার তৃণমূলের এই ঘোষণাতেই গোল বেঁধেছে বিরোধী ঐক্যে। আদানি প্রশ্নে সংসদ অচল থাকায় রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক আলোচনা হয়নি এখনও। নজিরবিহীন আচরণে জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতিকে বিরোধীরা অপমান করছেন, এই অভিযোগ তুলে বিজেপি শিবির বিরোধীদেরই কাঠগড়ায় তুলবে বলে সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে রবিবার তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন টুইট করেন, 'বিজেপি ভয় পেয়েছে, তাই তারা সংসদে আলোচনায় অংশ না নিয়ে পালাতে চাইছে৷ নরেন্দ্র মোদী সরকারকে চেপে ধরার সুবর্ণ সুযোগ সামনে, যেখানে সোমবার সংসদের উভয় কক্ষে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপরে আলোচনা হবে৷ কড়া নজর রাখা হবে। যদি কোনও দল বিশৃঙ্খলা করে, তা হলে তারা প্রকৃতপক্ষে বিজেপির অংশীদারের ভূমিকায় থাকবে৷ আমরা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস আলোচনা চাই, বিশৃঙ্খলা নয়৷'

    তৃণমূলের এই অবস্থানেই বেজায় চটেছে বিরোধী শিবিরের অন্যান্য কয়েকটি দল। কারণ, বিরোধী বৈঠকে স্থির হয়েছিল মোদীর শিল্পপতি বন্ধু গৌতম আদানির 'শেয়ার প্রতারণা' নিয়ে সম্মিলিত ভাবে সংসদে প্রতিবাদ দেখাবেন বিরোধীরা, শুক্রবার ওয়েলে নেমে প্রতিবাদের সেই চিত্র দেখাও গিয়েছে। আদানি প্রশ্নে তদন্ত ও সংসদে সরকারপক্ষের বিবৃতি দারি করা হবে। বাকি কর্মসূচি সোমবারের বিরোধী বৈঠকে স্থির হওয়ার কথা। তার আগেই তৃণমূল নেতার এই টুইটে ক্ষুব্ধ বিরোধী নেতাদের একাংশ। লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, 'এমনটা যে হবে সেটা জানাই ছিল৷ তৃণমূলের আসল উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট হয়ে গেল৷ এটাই আসলে ওদের চরিত্র৷ এদের মনে যখন এই ভাবনাই ছিল, তখন কেন বিরোধী বৈঠকে যোগদান করেছিল তৃণমূল? আমরা তাদের পায়ে ধরে সাধিনি, ওরা নিজেদের ইচ্ছেয় এসেছিল, ইচ্ছে মতো চলে গিয়েছে৷ মনে হয়, দিদিভাইকে ফোন করেছেন মোদীভাই৷ তাই তৃণমূলের এই অবস্থান বদল৷ তবে এর ফলে বিরোধী ঐক্য প্রভাবিত হবে না৷ আমরা দেশের মানুষের হয়ে সওয়াল করবই৷ বিরোধীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল৷'

    আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রন-ও বলেন, 'বিরোধীরা সকলে আলোচনার টেবিলে বসার পরে সম্মিলিত ভাবে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, এখানে কোনও একটি দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নই ওঠে না৷ সোমবার সকালে আবার বিরোধী বৈঠক হওয়ার কথা৷ তারপরে সংসদে গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্নার কথাও আছে৷ এই মুহূর্তে এটুকুই বলতে পারি, বিরোধী শিবিরের অন্যান্য দল তাদের অবস্থান থেকে সরছে না৷' এই পরিস্থিতিতে সোমবারের বিরোধী বৈঠকে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন কি না, সেদিকে নজর বিরোধী শিবিরের৷ তৃণমূলের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, সোমবার সংসদে সামনে বিরোধী শিবিরের প্রতিবাদ ধর্নায় যোগ দেবেন তাদের দুই সাংসদ শান্তনু সেন ও মহুয়া মৈত্র৷ পূর্বঘোষিত এই সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন হয় কি না, সেদিকেও দৃষ্টি থাকবে রাজনৈতিক মহলের৷

    এদিকে, রবিবার আদানি প্রতারণা ইস্যুতে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস৷ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, 'আদানি প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা দেখে আমারা নতুন সিরিজ শুরু করছি- 'হাম আদানিকে হ্যায় কওন'। প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনটি প্রশ্ন করা হবে৷' কংগ্রেস নেতা প্রশ্ন তুলেছেন গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানিকে নিয়ে, ২০১৬ সালে যাঁর নাম 'পানামা পেপার্স' কেলেঙ্কারিতে সামনে এসেছিল৷ প্রধানমন্ত্রী নিজে 'পানামা পেপার্স' কেলেঙ্কারিতে নাম থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তের কথা বললেও কেন এতদিন বিনোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? প্রশ্ন জয়রামের। রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই দিয়ে পদক্ষেপ করানো হলেও ভুরি ভুরি অভিযোগ থাকা আদানিদের বিরুদ্ধে কেন মোদী সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি, জানতে চান ৷ 'হাম আদানিকে হ্যায় কওন' সিরিজে রবিবার কংগ্রেসের তৃতীয় প্রশ্ন, দেশের বিভিন্ন বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একের পর এক তল্লাশি অভিযান চালানো মোদী সরকার এদেশের বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরগুলিতে ব্যবসার ক্ষেত্রে আদানিদের একচেটিয়া অধিকার দিয়ে দিল কেন ?
  • Link to this news (এই সময়)