• আদানি বিতর্কে মোদীর অস্ত্র রাফাল নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ’, পাল্টা তোপ রাহুলেরও
    আনন্দবাজার | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পরে তাঁর সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতার দিকে আঙুল উঠলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা নিয়ে মুখ খোলেননি। আজ কৌশলে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, রাফাল যুদ্ধবিমানের বরাত নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ তোলা হয়েছিল।

    এলআইসি-স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)-কে চাপ দিয়ে আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নি করানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা সংসদ অচল করে রেখেছেন। আজ এ নিয়ে প্রথম বার মুখ খুলে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘আদানিকে নিয়ে সংসদে যাতে আলোচনা না হয়, তার জন্য মোদীজি সব রকমের চেষ্টা করবেন। তার কারণ সবাই জানে।’’ প্রধানমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে রাহুল বলেন, ‘‘আদানির পিছনে কোন শক্তি রয়েছে, সংসদে আলোচনা হলে তা গোটা দেশ জেনে যাবে।’’ কৌশলে জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। তিনি মনে করিয়েছেন, রাফালের সময়েও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল-কে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে রাহুল-সহ কংগ্রেস সংসদ অচল করেছিল। কিন্তু সে অভিযোগ ধোপে টেকেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মিথ্যে যত বড়ই হোক, যত বারই বলা হোক, যত বড় ব্যক্তিই বলুন, এক দিন না এক দিন মিথ্যে অভিযোগের পর্দা ছিঁড়ে সত্য সামনে চলে আসে।’’

    প্রধানমন্ত্রী সরাসরি রাফালের নাম করেননি। করেননি রাহুলের নামও। কিন্তু বিজেপি শিবির বলছে, রাফালের সময় যেমন তাঁর বিরুদ্ধে অনিল অম্বানীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ধোপে টেকেনি, এ বারও গৌতম আদানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ সত্যি নয় বলেই বার্তা দিয়েছেন মোদী।

    ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা এবং তার বরাত অনিল অম্বানীর সংস্থাকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই কংগ্রেস নেতার অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল (হিন্দুস্তান এয়রোনটিক্স লিমিটেড)-কে বঞ্চিত করেছেন। আজ কর্নাটকের টুমকুরুতে হ্যাল-এর হেলিকপ্টার কারখানার উদ্বোধনে মোদী বলেন, ‘‘এই হ্যাল-কে অজুহাত করে আমাদের সরকারের উপরে নানা মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

    মানুষকে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সংসদ অচল করা হয়েছিল। এখন হ্যাল-এর হেলিকপ্টার কারখানা চালু হচ্ছে। কোনটা সত্যি, তা বাস্তব নিজেই বলছে।’’

    প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিতে নিশানা করলেও রাহুল আজ আদানিদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সরব হয়েছেন, ‘‘আমি অনেক বছর ধরেই একে ‘হম দো, হমারে দো’-র সরকার বলছি। সরকার আতঙ্কিত, তাই সরকার সংসদে আদানি নিয়ে আলোচনা চায় না।’’ রাহুলের কথায়, ‘‘আলোচনা হলেই কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে, তা স্পষ্ট হবে। লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ভারতের পরিকাঠামো দখল করা হয়েছে।’’

    মোদীর অভিযোগের জবাবে কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘ইউপিএ সরকারের রাফাল চুক্তিতে হ্যাল-কে ১০৮টি বিমান তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল। মোদী হ্যাল-কে বাইপাস করে ফ্রান্স থেকে ৩৬টি বিমান কিনেছেন। এখন কর্নাটক ভোটের জন্য মিথ্যে বলছেন।’’

    প্রধানমন্ত্রীকে ‘হম আদানি কে হ্যায় কউন’ বলে কটাক্ষ করে কংগ্রেস তাঁকে সরাসরি আদানি নিয়ে মুখ খোলার আহ্বান জানিয়েছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের পরেই এলআইসি-র আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নির শেয়ারের মূল্য ৩২ হাজার কোটি টাকা পড়েছে। এলআইসি-র শেয়ার দরও পড়েছে। সরকার কী করছে? কংগ্রেস আজ গোটা দেশে এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্কের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বম বলেন, ‘‘আমি এলআইসি কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে সমস্ত কর্মী ইউনিয়নের সঙ্গে এলআইসি-র তহবিলের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে যৌথ আন্দোলন নিয়ে কথা বলছি।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)