• ত্রিপুরায় মমতা-অভিষেকের রোড শো-এ জনজোয়ার ডবল ইঞ্জিন সরকার হটাব আমরাই, দাবি তৃণমূল সুপ্রিমোর
    বর্তমান | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • আগরতলা, ৭ ফেব্রুয়ারি: এবার দুয়ারে গুন্ডা নয়, দুয়ারে সরকার হবে। ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে একথাই বললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি সে রাজ্যে নির্বাচন। রাজ্যবাসী ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ঠিক করবেন ত্রিপুরার মসনদে এবার বসবে কোন রাজনৈতিক দল। শেষবেলায়  প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সব রাজনৈতিক দলই। স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। জানা গিয়েছে, ত্রিপুরায় ২৮ কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে বাংলার শাসক দল। নির্বাচনী প্রচারে দু' দিনের সফরে ত্রিপুরা গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন অভিষেক। গতকাল থেকেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে জোরকদমে ভোট প্রচার শুরু করেছেন তাঁরা। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পদযাত্রা করেন মমতা-অভিষেক। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ রবীন্দ্র ভবন থেকে শুরু হয় রোড শো। জনজোয়ার দেখা যায় এই পদযাত্রায়। কাতারে কাতারে মানুষ তাঁদের সঙ্গে পা মেলান। এরপর পাঁচ কিমি রাস্তা অতিক্রম করে ফের রবীন্দ্র ভবনেই এসে শেষ হয় এই পদযাত্রা। তারপর সেখানেই নির্বাচনী বক্তব্য রাখেন মমতা এবং অভিষেক। মঞ্চে ছিলেন ভূমিকন্যা তথা তৃণমূল সংসদ সদস্য সুস্মিতা দেবও।

    এদিন মঞ্চে প্রথমে বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে একমাত্র লড়াই করছে তৃণমূলই। ত্রিপুরা শান্তি চাইলে সিপিএম-বিজেপি নয় তৃণমূলই একমাত্র বিকল্প। তৃণমূল শুধু ভাষণ দেয় না, যা বলে তাই করে দেখায়। বাংলায় যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা যথাযথভাবে পালন করেছি। সুযোগ পেলে ত্রিপুরাতেও করব। অভিষেক আরও বলেন, ত্রিপুরা আর ডবল ইঞ্জিন সরকার চায় না। চায় বাংলার সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকার। এবার ত্রিপুরায় দুয়ারে গুণ্ডা নয়, দুয়ারে সরকার হবে। ২৫ বছর ত্রিপুরা সিপিএমের অপশাসন দেখেছে। বাংলা এবং ত্রিপুরা দুটি রাজ্যকেই কার্যত ধ্বংসাবশেষ করে দিয়েছে বামেরা। সিপিএমের সেই হার্মাদরাই আজ বিজেপির জল্লাদ বলেও দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মাটি কামড়ে ত্রিপুরায় পড়ে থাকুন। পরিবর্তনের সরকার প্রতিষ্টা করতেই হবে।

    এরপর মঞ্চে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, আপনাদের এবং আমার ভাষা এক। বাংলা, ত্রিপুরার সংষ্কৃতির কোনও পার্থক্য নেই। ত্রিপুরাটা আমার পুরোটাই আবার ঘোরা। রাজনীতি করার সুবাদে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেছি। কাজেই ত্রিপুরা একেবারেই আমার কাছে কোনও নতুন জায়গা নয়। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে দিতে অভিষেককেই দায়িত্ব দিয়েছিলাম যাতে তাঁরা ত্রিপুরাকে অত্যাচারমুক্ত করতে পারে। বলেন, এই রাজ্যে অভিষেক, সুস্মিতা দেবের উপর হামলা হয়েছে। বুলেটপ্রুফ গাড়ি না হলে সেদিন অভিষেক বেঁচে ফিরতেই পারত না। নাম না করেই ওই ঘটনার জন্য গেরুয়া শিবিরকেই নিশানা করেন তিনি। বলেন, গতকাল আমি মাতাবাড়ির মন্দিরে গিয়েছিলাম। এখনও একই রকম অবস্থা। গত কয়েক বছরে কোনও উন্নয়নে হয়নি। আমাদের দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারকেশ্বরে গিয়ে দেখুন। কত কাজ হয়েছে সেখানে। কেন্দ্রকে নিশানা করে তিনি বলেন, কোভিড আবহে যেখানে দেশজুড়ে বেকারত্বের হার বেড়েছে সেখানে আমাদের রাজে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। জানান, যদি এই রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে সেক্ষেত্রে এখানেও বাংলার মতো উন্নয়নের জোয়ার বইবে। হবে কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো জনমুখী প্রকল্পও। বাংলায় যে উন্নয়ন হয়েছে তার অনেকটা ভাগ ত্রিপুরাবাসীও পাবে। বাংলার থেকে ত্রিপুরার দূরত্বও বেশি নয়। বাংলা আর ত্রিপুরা দুই ভাই-বোন। সুযোগ পেলে এখানে হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউন তৈরি করা হবে। পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, সংবিধান, ইতিহাস ভুলিয়ে দিয়েছে ওরা। দেখা যাক, ২০২৪-এ কী হয়। তৃণমূলই ডবল ইঞ্জিন সরকারকে হটাবে। একসময়ে আমাদেরও শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মনে রাখবেন, ঘাসকে কখনও শেষ করা যায় না। এখন আমরা বড় বৃক্ষ হয়ে গিয়েছি। এখন আর আমাদের শেষ করা যাবে না। বক্তব্য শেষে মমতা বলেন, নির্বাচনের পর ফের ত্রিপুরাতে আসব। ডবল ইঞ্জিন হয় নাকি সিঙ্গল ইঞ্জিন হয় সেটা দেখব। আমরা ত্রিপুরাকে ছাড়ছি না।
  • Link to this news (বর্তমান)