• আচমকা উধাও শীত, আলু চাষে নাবিধসার হানা, দুশ্চিন্তায় চাষিরা
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মাঘের শুরুতেই উধাও শীত। আচমকা তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে আলুর ফলনে প্রভাব পড়ছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই তীব্র শীতে আলু চাষে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ঠান্ডা কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। আলুর নাবিধসা রোগ চিন্তায় ফেলেছে চাষিদের। মুর্শিদাবাদ জেলায় রবি মরশুমে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। শীতের ওঠানামা ও ঘন কুয়াশার ফলে আলুর জমিতে নাবিধসা রোগ দেখা দিচ্ছে। জেলা কৃষিদপ্তরের তরফে চাষিদের সতর্ক করা হচ্ছে। প্রতিটি ব্লক কৃষিদপ্তরের তরফ থেকে লিফলেট দিয়ে চাষিদের নাবিধসা রোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

    জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা(প্রশাসন) মোহনলাল কুমার বলেন, আমরা চাষিদের মধ্যে লাগাতার প্রচার করছি। নাবিধসা থেকে বাঁচার জন্য কোন কোন ছত্রাকনাশক কীভাবে স্প্রে করতে হবে তার নির্দেশ দিয়েছি। প্রতিটি ব্লকে এবং মহকুমায় কৃষিদপ্তরের তরফ থেকে লিফলেট বিলি করাও হচ্ছে। কিছু জমিতে নাবিধসা রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। তবে শীত কমে যাওয়ায় ফলনে প্রভাব পড়বে। আলু চাষের জন্য অতিরিক্ত শীত যেমন ক্ষতিকর তেমনই আচমকা গরম পড়াও ক্ষতিকর। এখন রাতের তাপমাত্রা না কমায় আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। 

    আলু চাষিরা বলছেন, শীত এতটা কমে যাওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। কয়েকদিন আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এখন রাতের তাপমাত্রা আবার ২০ ডিগ্রির বেশি থাকছে। শীত কমে যাওয়ায় এবার আলুর নাবি ধসা রোগ বাড়ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ছত্রাকঘটিত মারাত্মক রোগ হল নাবিধসা। ১৬-২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম বা বেশি তাপমাত্রায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯০ শতাংশের বেশি হলেই দ্রুত এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। পৌষের শেষের দিকে কুয়াশার দাপটে জেলার অনেক জমিতেই নাবিধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। মাঘ মাসেও শীত কমে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ধসা রোগে আলুর পাতা প্রথমে বাদামি ও পরে নীলচে হয়ে যায়। গাছের ডগাও বাদামি হয়ে যায়। প্রথমে আলু গাছের নীচের দিকের পাতায় সংক্রমণ ঘটে। তারপর পাতা পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। জমির কোনও অংশে একবার রোগ দেখা দিলে তা গাছের পাতার স্পর্শে, সেচের জলের মাধ্যমে জমির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই ছত্রাকনাশক সঠিকভাবে স্প্রে করতে হবে। 

    দৌলতাবাদের চাষি মৌসুমি বিশ্বাস বলেন, কয়েক বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। ধসা রোগে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। হরিহরপাড়ার এক আলু চাষি বলেন, দিনে ও রাতে তাপমাত্রার ব্যাপক হেরফের হচ্ছে। এখন ঠান্ডা উধাও। এছাড়া সকালের দিকে কুয়াশায় আলু গাছে নাবিধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। কৃষিদপ্তরের নির্দেশমতো ছত্রাকনাশক স্প্রে করছি। তবে ফলনে ভালো প্রভাব পড়বে বলেই মনে হচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। নিয়মিত জমি পরিদর্শন করতে হবে। রোগগ্রস্ত গাছ দেখলেই জমি থেকে তুলে ফেলতে হবে। আক্রান্ত জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।  (ফাইল চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)