• চাপে পড়ে কোণঠাসা, আদানির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে বিজেপি? যোগীরাজ্যে সাড়ে ৫ হাজার কোটির টেন্ডার হঠাৎ বাতিল
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: আদানি ইস্যুতে তুলকালাম জাতীয় রাজনীতি। ঘরে-বাইরে সঙ্কটের মুখে মোদি সরকার। সংসদ থেকে সড়কে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিরোধীরা। দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে চেপে ধরছে কেন্দ্রকে। আবার একজন শিল্পপতিকে নিয়ে এভাবে কোণঠাসা হওয়ায় বিজেপির অভ্যন্তর, এমনকী সঙ্ঘ পরিবারেও তীব্র উষ্মা তৈরি হয়েছে। এতে সবথেকে অস্বস্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কারণ, বিরোধীদের তাবৎ অভিযোগের লক্ষ্য এখন গেরুয়া শিবির নয়। বরং ব্যক্তিগতভাবে মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা এবং সেই সূত্রে বিপুল লক্ষ্মীলাভ। আর এই পরিস্থিতিতেই মোদির অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দলগতভাবে আদানির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করল বিজেপি। প্রথম আভাস এসেছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ থেকে। গেরুয়া শিবিরের ‘মডেল রাজ্যে’ হঠাৎই আদানি গোষ্ঠীর পাওয়া সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার স্মার্ট মিটার প্রকল্পের টেন্ডার পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছে সরকারি সংস্থা মধ্যাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। রহস্যজনকভাবে এর কারণ হিসেবে শুধু বলা হয়েছে, ‘টেকনিক্যাল সমস্যা’।

    শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার সংসদে পর্যন্ত এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় শাসকদল ছিল অনেকটাই নরম। লোকসভায় সরাসরি মোদি ও আদানির বন্ধুত্বকেই স্বজনপোষণের শিকড় আখ্যা দিয়ে লাগাতার আক্রমণ করেন রাহুল গান্ধী। অথচ ট্রেজারি বেঞ্চ অর্থাৎ বিজেপির এমপিরা এদিন সেভাবে বাধা দেননি। বিরোধীদের তোপের কথা আঁচ করে লোকসভায় অমিত শাহ, নির্মলা সীতারামন, রাজনাথ সিং, নীতিন গাদকারিদের মতো সিনিয়র মন্ত্রীরা কেউ হাজির ছিলেন না। প্রহ্লাদ যোশি, অর্জুন মেঘওয়াল, কিরেন রিজিজুদের মতো কয়েকজন মন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু আপত্তি জানান বটে। কিন্তু রাহুলের এই মোদিবিরোধী ঝড় থামাতে গোটা সরকারি বেঞ্চ উত্তাল হয়ে ওঠেনি একবারও। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী এবং গৌতম আদানির ছবি ভরা লোকসভায় তুলে ধরেন ‘ভারত জোড়া যাত্রা’ সেরে আসা কংগ্রেস নেতা। তখনও কাউকে চিৎকার কিংবা পাল্টা স্লোগান দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা যায়নি।

    অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের ১৯টি জেলাজুড়ে ৭৫ লক্ষের বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে আধুনিক স্মার্ট মিটার পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে যোগী সরকার। তাবৎ দরপত্রকে পরাস্ত করে আদানি গোষ্ঠীর টেন্ডারই ওই চুক্তি হাসিল করেছে বলে খবর। কিন্তু গত শনিবার আচমকা তা বাতিল করে দেয় উত্তরপ্রদেশ বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা। জানায়, নতুন করে টেন্ডার ডাকা হবে। কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, আদানি গোষ্ঠীর এই চুক্তি পাওয়া নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স ফেডারেশন এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্য বিদ্যুৎ গ্রাহক কাউন্সিলের পক্ষ থেকে। কারণ, একে তাদের এই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা নেই। তার উপর স্মার্ট মিটারের দাম অস্বাভাবিক বেশি দেখানো হয়েছে গুজরাতি শিল্পপতির সংস্থার টেন্ডারে। যোগী আদিত্যনাথ সরকার এভাবে এককথায় এত বড় এক চুক্তি বাতিল করায় একটা বিষয় কার্যত স্পষ্ট—বিজেপির একটি প্রভাবশালী অংশ আদানিকেই ভিলেন প্রতিপন্ন করে দায় এড়াতে চাইছে। তাহলে কি ব্যক্তিগতভাবে নরেন্দ্র মোদি ও গৌতম আদানির মধ্যে সম্পর্কই বিরোধীদের আক্রমণের ভরকেন্দ্র হওয়ায় সতর্কতা হিসেবে এই কৌশল গেরুয়া শিবিরের? কিন্তু এভাবে দূরত্ব বাড়ালেই কি বিরোধীদের চুপ করানো যাবে? প্রশ্ন থাকছেই। 
  • Link to this news (বর্তমান)