পিএফের ১৭৬৩ কোটি লগ্নি অথই জলে সুদ মেটাচ্ছে না যোগীরাজ্য,তালিকায় বহু কেন্দ্রীয় সংস্থাও
বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: সাধারণ মানুষ তার কষ্টার্জিত উপার্জনের একাংশ সঞ্চয় করে প্রভিডেন্ট ফান্ডে (পিএফ)। আপদবিপদে বা অবসর জীবনে এই সঞ্চয়ই বহু মানুষের অন্যতম ভরসা। কিন্তু সেখানেও উঁকি দিচ্ছে সংশয়ের সিঁদুরে মেঘ! কেন এই আশঙ্কা? পিএফে জমানো টাকা বিভিন্ন সরকারি বন্ড ও বেসরকারি সংস্থায় লগ্নি করে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন বা ইপিএফও। তাদের শেষতম বার্ষিক আর্থিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাজারে লগ্নি করা প্রায় ১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। সুদ তো দূরের কথা, আসল টাকাই ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। টাকা ফেরাতে না পারার তালিকায় বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা তো আছেই। পাশাপাশি রয়েছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা। তাদের কাছে পড়ে থাকা টাকা বছরের পর বছর উদ্ধার করতে পারছে না পিএফ কর্তৃপক্ষ। স্বভাবতই এর প্রভাব পড়তে চলেছে সাধারণ মানুষের জমানো টাকায়। কারণ, পিএফে যে সুদ মেলে, তা আসে লগ্নির লাভ থেকেই। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, মূল টাকাই যদি উদ্ধার না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের হকের সুদে কোপ পড়তে বাধ্য বলে মানছেন পিএফ কর্তারা।
সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনের বন্ডে ২৫ কোটি টাকা লগ্নি করেছিল ইপিএফও। সেই টাকা দীর্ঘদিন না মেটানোয় আদালতে যায় কেন্দ্র। আদালতে দাঁড়িয়ে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে সেরকম কিছুই করেনি যোগীরাজ্য। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষে লগ্নির আসল অঙ্ক মেটালেও সুদ বাবদ পাওনা প্রায় ৫৮ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা মেটাচ্ছে না তারা। কেন্দ্রীয় সরকারের ভারী শিল্পমন্ত্রকের আওতাধীন আরসিএলের কাছে বকেয়া প্রায় ৪ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা এইচএমটির থেকে পিএফ পায় ৩ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। পাঞ্জাব সরকারের থেকে সুদে-মূলে প্রায় ৪ কোটি ৩ লক্ষ টাকা পাওনা আছে পিএফের। সেখানকার মুখ্যসচিবের কাছে বারবার দরবার করেও সেই টাকা আদায় করতে পারছে না তারা। এর পাশাপাশি আইএল অ্যান্ড এফএসের থেকে পিএফের পাওনা প্রায় ৩৮৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। ডিএইচএফএলে লগ্নি করে ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না ৭৭৩ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। রিলায়েন্স ক্যাপিটাল থেকে ৫৩৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা প্রাপ্য পিএফ সংস্থার। এনআইএনএল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় তিন লক্ষ টাকা।
লগ্নি করা টাকা ও বিপুল পরিমাণ সুদ বকেয়া পড়ে থাকা নিয়ে পিএফের সাম্প্রতিক বৈঠকে সরব হন অছি পরিষদের সদস্য দিলীপ ভট্টাচার্য। কার্যবিরণীতে তা প্রকাশ করেছে ইপিএফও। দিলীপবাবুর কথায়, শ্রমিক- কর্মচারীর কষ্টার্জিত টাকা যদি লগ্নি করে ফেরত না পাওয়া যায়, তাহলে সুদের উপর যেমন তার প্রভাব পড়বে, তেমনই বাদ যাবে না পেনশন ফান্ডও। অর্থাৎ দু’টি ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হবেন তাঁরা। সাধারণ কর্মীকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনও সরকারের থেকেই কাম্য নয়। ওই টাকা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। টাকা লগ্নির সময় যে সচেতনতার প্রয়োজন ছিল, তা গ্রহণ করা হয়নি। টাকা ফেরাতে যে তৎপরতার দরকার ছিল, তাতেও যথেষ্ট খামতি থেকে গিয়েছে।