• নিয়োগ দুর্নীতিতে জিজ্ঞাসাবাদ নেতাকে
    আনন্দবাজার | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • প্রথমে কুন্তল ঘোষ। তার পরে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি চক্রে বলাগড়ের দুই যুব তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। বিশেষত, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু গ্রেফতার হতেই জেলার রাজনৈতিক মহলে শোরগোল তুঙ্গে। ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূলের অন্দরেই। শান্তনুর বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলছেন তৃণমূলের একাংশ।

    নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দু’বার সিবিআই, দু’বার ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে চুঁচুড়ার তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু বাগকে। সূত্রের খবর, একাধিক বিএড কলেজের সঙ্গে দিব্যেন্দু যুক্ত। ওই সব প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু পড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কুন্তল। দিব্যেন্দুর দাবি, ‘‘চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য আমার মাধ্যমে শতাধিক ছাত্রছাত্রীর থেকে ৩ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা কুন্তল নিয়েছিলেন। অনেকের চাকরি না হওয়ায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ফেরতের জন্য চেক দিয়েছিলেন কুন্তল। চেক বাউন্স হয়।’’ দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘সিবিআই-ইডিকে আমার জানা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আবার ডাকলে যাব। তদন্তে সহযোগিতা করব।’’

    কিছু দিন আগে জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্যা দফতরের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ‘পোস্ট’ করে সেখানে শান্তনুর ঘর বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন। একই দাবি তুলছেন জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যদের আরও কয়েক জন। তাঁদের এক জন সোমবার বলেন, ‘‘এখনওজেলা পরিষদে শান্তনুর নামে বোর্ড জ্বলজ্বল করছে। দল এখনই ওঁর বিরুদ্ধে সংগঠনগত ভাবে দল ব্যবস্থা না নিলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফল ভয়ঙ্কর হবে।’’

    জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমান বলেন, ‘‘কারও নাম জ্বলজ্বল করছে কি না, জানা নেই। বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করব না। রাজ্য নেতৃত্ব যে পরামর্শ দেবেন বা ব্যবস্থা নেবেন, সেটাই হবে।’’ বলাগড়ের জেলা পরিষদের সদস্যা রুনা খাতুনের বক্তব্য, ‘‘ইডি হেফাজতে থাকা নেতা আমাদের দলীয় সংগঠনের মুখ আদৌ ছিলেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর প্রভাব আদৌ পড়বে না। আমাদের সংগঠন অত দুর্বল নয়।’’

    তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, গত বিধানসভা ভোটে পুরশুড়ায় দলীয় প্রার্থীকে হারানোর পিছনে তৃণমূলেরই একাংশের ভূমিকা ছিল। শান্তনুর গ্রেফতারের পরে এ নিয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। জেলা পরিষদের ওই সদস্য বলেন, ‘‘খানাকুল, পুরশুড়া, ধনেখালি, সিঙ্গুর, গোঘাট, তারকেশ্বরের নেতারা ভোটে দলের তৎকালীন সভাপতিকে হারানোর খেলায় মুখিয়ে ছিলেন। পুরশুড়ার এক দলীয় সদস্যছ’মাস জেলা পরিষদে ঢুকতে পারেননি। ধনেখালির এক নেত্রীতাঁকে সঙ্গে নিয়ে জেলা পরিষদে ঢুকিয়ে আসেন।’’ রুনার প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলকে কে কী জানিয়েছেন,জানি না।’’

    গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় হুগলিতে তৃণমূল সভাপতি ছিলেন দিলীপ যাদব। পুরশুড়ায় তিনিই প্রার্থী ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, নির্বাচনের আগে-পরে দলের রাজ্য নেতৃত্ব এবং ভোটকুশলী সংস্থাকে সমস্ত রিপোর্ট তিনি জানিয়েছিলেন। এর পরেও দল সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এখন সেই সব ভুলেরই মাসুল দিতে হচ্ছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)