• হিমঘরের অভাব, আলুর দাম কমায় উদ্বেগে চাষি
    আনন্দবাজার | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • রাজ্য বিধানসভায় সোমবার আলু নিয়ে হইচই হয়েছে। এ দিকে, উত্তরবঙ্গে, বিশেষ করে গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় চাষিদের মূল সমস্যা হল, আলু চাষের পরে তা মজুত করে রাখা। মালদহ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে আলুর উৎপাদনের তুলনায় পর্যাপ্ত হিমঘর নেই। আলু মজুত করে রাখার জায়গা খুব কম। আর তা বাড়ছে না কেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

    প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির পরে আলুর দাম পড়তে শুরু করে। এ বারেও তাই হয়েছে গৌড়বঙ্গে। বাজারে খুচরো আলুর দর ১০-১২ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় চাষি দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। তা নিয়ে তিন জেলাতেই সম্প্রতি কৃষকসভা আন্দোলন করেছে। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের মতো এলাকায় আলুর বন্ড নিয়ে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। তা নিয়ে রোজই ঝামেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহের চাষিরাও পর্যাপ্ত আলু হিমঘরে রাখতে পারছেন না বলে অভিযোগ।

    ইসলামপুরের বাসিন্দা জাহিদ আখতার বলেন, ‘‘লোকের জমির লিজ নিয়ে আলু লাগিয়েছি। বন্ড দিয়েছে মাত্র ৫০ বস্তার। প্রায় ৫০০ বস্তা আলু হয়েছে। বাকি আলু রাখব কোথায়?’’ একই প্রশ্ন শ্রীকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা মানিক দাসের। তিনিও একই সমস্যায় বিপাকে। চাকুলিয়ার বাসিন্দা রফিক আলম জানান, ৫০ বস্তা আলুর বন্ড পেয়েছেন। কম দরে আলু বিক্রি করে দিতে হবে। জেলার কৃষকেরা জানান, জলের দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। রিংকুয়া এলাকার এক আলু চাষি বিজয় পালের মত, হিমঘর নিয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। ইসলামপুর ছাড়াও গোয়ালপোখর, চোপড়া, করণদিঘি, চাকুলিয়ার মত এলাকায় আলু হয়। একই সমস্যায় চাষিরা।

    দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কৃষি এবং কৃষি বিপনণ দফতর সূত্রে দাবি, জেলায় যে পরিমাণ আলু এ বার উৎপাদন হয়েছে, তার তুলনায় হিমঘরে জায়গা কম ঠিকই। কিন্তু এই উৎপাদনের কিছুটা বিক্রি হয়ে যায়। বাকি আলুর কিছুটা জেলার বাইরে চলে যায়, বাকিটা চাষি নিজেদের ঘরে আগামী ২ মাস পর্যন্ত মজুত রাখেন। কিন্তু বাজারে আলু ৮-১০ টাকা নেমেছে। চাষিকে কার্যত ‘অভাবি’ বিক্রিই করতে হচ্ছে এই জেলাতেও। সে জেলাতেও রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কৃষকসভা।

    মালদহে ১৪টি হিমঘর থাকলেও তা ছোট ছোট। তাই প্রচুর পরিমাণ আলু এ বার উৎপাদন করেও সমস্যা চাষি। বাইরে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। জেলায় সাড়ে আট হাজার হেক্টরে আলু চাষ হয়েছে। কিন্তু মাত্র ১২ হাজার চাষি আলু রাখার সুযোগ পাবেন। এই জেলাতেও বেশি সংখ্যায় হিমঘর প্রয়োজন।

    দুই দিনাজপুরে প্রায় ১৩ লক্ষ টন আলু হয়। হিমঘরে রাখা যায় বড় জোর দেড় লক্ষ টন। মালদহে চার লক্ষ টন উৎপাদিত আলুর মাত্র এক লক্ষ ৮২ হাজার ৩২০ টন হিমঘরে রাখা সম্ভব। রাজ্যের মন্ত্রী তথা প্রাক্তন কৃষি বিপণনমন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে হিমঘর কম। সেগুলি তৈরি হয় মূলত বেসরকারি উদ্যোগে। রাজ্য সরকার ছাড়, ভর্তুকির সুযোগ থাকলে দেয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গে বেসরকারি মালিকেরা হিমঘর গড়ায় খুব একটা আগ্রহ দেখান না।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)