• ইছাপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে মেয়ে হিসেবে পুজিত হন উমা পানিহাটির গাঙ্গুলি বাড়িতে পুজো পান ‘বুড়া মা’
    বর্তমান | ০২ অক্টোবর ২০২২
  • সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়, বারাকপুর: সাড়ে তিনশো বছর ধরে পানিহাটির গাঙ্গুলিবাড়িতে মা দুর্গাকে পুজো করা হয় ‘বুড়া মা’ হিসেবে। ঢাকার বিক্রমপুর থেকে শুরু হওয়া পুজো এখন পানিহাটিতে একইরকম নিয়মবিধি মেনে চলছে। তবে এখানে মা দুর্গার ডানদিকে মা লক্ষ্মীর পাশে থাকে কার্তিক। কলা বউ বসে কার্তিকের পাশে। মা দুর্গার বাঁদিকে সরস্বতীর পাশে থাকে গণেশ। বাংলাদেশে ওই বাড়িতে মোষ, পাঁঠা বলি হতো। বর্তমানে অবশ্য বলি প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ষষ্ঠীর বোধন দিয়ে পূজা শুরু হয়।

    বাড়ির কর্তা তাপস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশের ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পুজো হতো। দেশভাগের সময় আমাদের পূর্বপুরুষ এদেশে চলে আসার সময় সেখানকার মাটি নিয়ে এসেছিলেন। মণ্ডপ তৈরির সময় সেই মাটি এখনও দেওয়া হয়। কেন দুর্গাকে বুড়া মা বলা হয়? তাপসবাবু বলেন, বাংলাদেশ থেকেই মা দুর্গাকে বুড়া মা বলে ডাকার রেওয়াজ। আমি ছোট বেলায় শুনেছি বাবা-জ্যাঠারা বলতেন, বুড়া মা-ই কী জয়! সেই রেওয়াজ চলে আসছে। এখনও বহু মানুষ মানত করে গয়না দিয়ে যায়। মায়ের ভোগ, পুজোর আয়োজন হয় সাড়ে তিনশো বছরের রীতি মেনে। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আর একটি বনেদি বাড়ির পুজো হল ইছাপুরের নবাবগঞ্জের ভট্টাচার্যবাড়ির পুজো। মহালয়ার পরের দিন পুজো শুরু হয়। দুশো পঁচাত্তর বছরের ঐতিহ্য। এই নিয়ে ১৩টি প্রজন্ম পুজো করছে। মেদিনীপুর থেকে টোল খুলতে নবাবগঞ্জে এসেছিলেন বলরাম তর্কালঙ্কার। নতুন জায়গা। ধীরে ধীরে জমে ওঠে টোল। একদিকে টোলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে শিক্ষক হিসেবেও প্রভাব বাড়তে থাকে তর্কালঙ্কারের। গঙ্গার তীরে নবাবগঞ্জে ভট্টাচার্য পরিবারে পুজো শুরু করেন রামভদ্র তর্কালঙ্কার। সালটা ১৭৪৭। অস্থায়ী হোগলা ঘরে হয় প্রথম পুজো। পরে তা পাকা হয়। মজবুত হয় ভিত। এরপর ভালো-মন্দে ভট্টাচার্যদের ১৩ প্রজন্ম কেটে গিয়েছে। উমাকে আজও মেয়ে হিসেবে পুজো করা হয় ভট্টাচার্য দালানে। মহালয়ার আগের দিন ঘরে আসেন মেয়ে। দালানে মহালয়া কাটে পরিবারের সঙ্গে। তারপর শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। সোনার গয়নায় সেজে ওঠেন উমা। অন্নভোগে শুরু হয়ে যায় পুজো। সপ্তমী থেকে নবমী চলে পাঁঠা বলি। দশমীতে ফল বলি। তবে এখনও ভট্টাচার্যদের প্রতিমা বিসর্জনের পরই এলাকার অন্য প্রতিমা নিরঞ্জন হয়, এটাই নিয়ম। পুজো চালাতে লিজ নেওয়া হয়েছে তিনটি পুকুর, জানালেন ওই পরিবারের সদস্য তাপস ভট্টাচার্য।
  • Link to this news (বর্তমান)