• 'স্যার আমি কিছু বলতে চাই', শুনেই মানিককে ধমক কোর্টের
    এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৩
  • এই সময়: এক সপ্তাহে আদালত কক্ষে বিচারকের কাছে হাতজোড় করে জেলবন্দি মানিক ভট্টাচার্য আর্জি জানিয়েছিলেন, 'হয় আমাকে রেহাই দিন, নয়তো এমন কোনও রায় দিন, যাতে কাল সকালে আর ঘুম না-ভাঙে।' মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তাঁর আইনজীবী সওয়াল করার পরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ফের নিজে সওয়াল করতে গিয়ে বিচারকের ধমক খেলেন।

    ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক শুভেন্দু সাহা তাঁকে বলেন, 'আপনার কিছু বলার হলে এই বাড়িতে নয়, লাল বাড়িতে (হাইকোর্টে) যান। এখানে নয়।' শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় মানিককে এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সশরীরে পেশ করেছিল ইডি। একই মামলায় এদিন তাঁর স্ত্রী শতরূপা এবং ছেলে সৌভিককে এদিন পেশ করার দিন ধার্য থাকলেও সশরীরে তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়নি।

    মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত শুনানির শেষ দিকে বলেন, 'আমার মক্কেল কিছু বলতে চান।' তখনই মানিককে হাইকোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেন বিচারক। মানিক অবশ্য এর পরেও বলতে থাকেন, 'স্যর আমি কিছু বলতে চাই।' সেটা শুনে বিচারক তাঁর আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, 'এখানে আমরা সবাই আইনের ছাত্র। শুনেছি, উনিও আইন কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন।

    ফলে, উনি নিশ্চয়ই আইন জানেন এবং কোর্টের নিয়মও জানেন।' শুনানি শুরুর পর ততক্ষণে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিচারক মানিককে বলেন, 'আপনার আইনজীবীর কথা তো এতক্ষণ ধরে শুনলাম। এর পরেও আপনার কী বলার থাকতে পারে?' মানিক সংবিধানের নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলতে যান, 'আমি ৫০০০ পাতা পড়েছি...।' তাঁকে মাঝপথে থামিয়ে বিচারক প্রশ্ন করেন, 'আপনাকে কি আমি কথা বলার অনুমতি দিয়েছি?' তখন চুপ করে যান মানিক।

    মানিকের স্ত্রী শতরূপার পক্ষে এদিন আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় যুক্তি দেন, '৩০ দিন ধরে উনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। ওঁকে জেরাও করা হচ্ছে না। তা হলে কেন আটকে রাখা হচ্ছে?' যে কোনও শর্তে শতরূপার জামিনের আর্জি জানান তিনি। ইডি-র আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে পাল্টা বলেন, 'নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় উনি বিদেশ ঘুরে এসেছেন। এই টাকার উৎস কী, তার জবাব ওঁর কাছে নেই।'

    মানিকের ছেলে সৌভিকের আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্যও বলেন, 'গত ৩০ দিন ধরে আমার মক্কেলকে জেরা করা হয়নি। অথচ, তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। যে কোনও শর্ত মানতে আমার মক্কেল রাজি। দয়া করে জামিন দিন।' মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্তও জানান, তাঁর মক্কেলকে দীর্ঘ দিন ধরে জেরা করা হচ্ছে না। তার পরেও তিনি তদন্তে অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনিও এই যুক্তি দেখিয়ে জামিনের আর্জি জানান।

    পাল্টা মানিকের জামিনের আর্জি খারিজ করতে গিয়ে একদিকে যেমন রাজনৈতিক পরিচয়ের যুক্তিকে হাতিয়ার করেছে ইডি, তেমনই মানিকের ভাইয়ের বক্তব্যকেও যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে তারা। ইডি-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, 'উনি (মানিক) একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। উনি প্রভাবশালী বলেই এখনও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি।'

    তাঁর স্ত্রী এবং ছেলের এই মামলায় যুক্ত হওয়ার নেপথ্যে মানিকই দায়ী বলে দাবি করা হয় ইডি-র তরফে। ইডি-র কৌঁসুলির বক্তব্য, 'বাবা সর্বদা সন্তানকে রক্ষা করে। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে ওঁর জন্যই স্ত্রী এবং সন্তান জেলে রয়েছেন।' এখানেই থেমে না-থেকে এদিন মানিকের ভাইয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন ফিরোজ।

    তাঁর দাবি, 'ওঁর ভাই হীরালাল ভট্টাচার্য আমাদের বলেছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে উনি (মানিক) তাঁর দাদা।' জোর করে তাঁর অ্যাকাউন্টও মানিক ব্যবহার করে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইডি। দু'পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আগামী ১৮ মে পর্যন্ত পর্যন্ত মানিককে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
  • Link to this news (এই সময়)